শুভ সন্ধ্যা।
এখানে যারা উপস্থিত আছেন তাদের সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।
ধন্যবাদ পেনকে, বিশেষ করে ইংলিশ পেনকে। আমাকে এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন বলে।
আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি মার্গারিট উড এর প্রতি। মার্গারিট আজ তার এক অর্জনের সাথে আমাকে অংশীদার করে নিলেন। আমি খুব খুব আনন্দিত এবং সন্মানিত বোধ করছি। এবং এই উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা নিশ্চয়ই আমাকে আগামীর কঠিন পথ চলাতে শক্তি যোগাবে।

সুধীবৃন্দ
একবছর আগে কিভাবে যেন বেঁচে গিয়েছিলাম। প্রাথমিক ধকল কাটিয়ে যখন অনুভব করেছিলাম যে বেঁচে গেছি, তখন সত্যি মনে হয়েছিল জীবনটা আসলেই খুব প্রয়োজনীয়।  এর আগে কখনোই এভাবে জীবনকে অনুভব করতে পারিনি হয়ত।
কিন্তু আমার এই হঠাৎ বেঁচে যাওয়ার সব আনন্দ ফিকে হয়ে আসে তখনই যখন চোখে ভাসে দীপনের মুখ। অভিজিৎ-অনন্ত-নীলের ছবি যখন স্লাইড শো’র মত করে আমার সব চিন্তা ও মানসপটে দাগ কেটে কেটে প্রশ্ন আঁকে। ওদের জীবনও তো খুব সুন্দর ছিল, প্রয়োজনীয় ছিল। এবং গত দুই বছরে আরও যারা হত্যাকান্ড ও আক্রমনের শিকার হয়েছেন তাদের আত্মোৎসর্গের কথা মনে হলে আমার এই বোনাস জীবনটাকে অনেক বেশি দায়গ্রস্থ জীবন বলে মনে হয়। আপনারা জানেন সেদিন আমার সাথে আহত হয়েছিলেন লেখক রণদীপম বসু ও কবি তারেক রহিম। সেদিন যদি তারা সেসময় উপস্থিত না থাকতেন এবং আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ না করতেন তাহলে আজ আমার এখানে দাড়িয়ে কথা বলার সুযোগ হতো না। তারেক রহিম এবং রণদীপম বসু এখনও তাদের শারীরিক আঘাতের ক্ষত ও মানসিক যন্ত্রনা নিয়ে দিন যাপন করছেন। রণদীপম বসু এক চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছেন বাংলাদেশে।
আমি আপনাদেরকে আরও অবহিত করতে চাই তাদের সম্পর্কে, যেসব ব্লগার-লেখক বর্তমানে নিরাপত্তার কারণে বসবাস করছেন বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে। এদের অনেকের ভিসার মেয়াদ উত্তির্ণ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে স্ত্রী-সন্তানসহ ভিন্ন দেশে দীর্ঘদিন ধরে চরম অনিশ্চিয়তা নিয়ে ও মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। আমি আপনাদের মাধ্যমে  আন্তর্জাতিক সংস্থাসমুহের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, এই মানুষগুলোকে যেন একটা নিরাপদ আশ্রয়ের এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করার সুযোগ করে দেয়া হয়।

সুধীবৃন্দ,

আপনারা জানেন আমার উপর আক্রমনের দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল আনসারুল্লা বাংলা টিম। অভিজিৎ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছিল আল কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা। এবং সম্প্রতি নৃশংস ঢাকা এটাকের  দায় স্বীকার করেছে আইএসআইএস। এটা এখন প্রমাণিত সত্য যে, নাম অনেক হলেও এই ইসলামি আদর্শধারি সবগুলো সন্ত্রাসবাদী গোষ্টির শিকড় কোথাও না কোথাও গিয়ে একজায়গাতেই জড়ো হয়। আনসারুল্লা বাংলাটিম  তাদের বিবৃতিতে বলেছিল, আমি যেহেতু ইসলাম বিরোধী বই প্রকাশ করি এবং নিজের লেখা,মত প্রকাশ ও অন্যান্যভাবে  ইসলাম ধর্ম ও মতবাদের বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে সমালোচনাকারী লেখকদের পৃষ্টপোষকতা করি, সেহেতু তারা আমাকে হত্যা করার জন্য  আক্রমণ করেছিল। বাংলাদেশে অনেকদিন ধরে,  কয়েক দশক ধরে ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন অনুযায়ি রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। এই চেষ্টাকারীরা ইসলামী রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়েই ১৯৭১এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীকে সমর্থন করেছিল এবং ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা ও গণধর্ষনে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি সময়ে জাতির জনকের হত্যাকান্ডের পর দুই দুইটা সামরিক শাসনের প্রতক্ষ – পরোক্ষ মদদে ও সহায়তায় এই শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রত্যাবর্তনের সুযোগ পায় এবং ব্যবসা ও অন্যান্য সামাজিক -সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান প্রতিষ্ঠা করে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনলাইন এক্টিভিজমের মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক চেতনা  এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি তরুণ সমাজের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হওয়ার প্রক্ষিতে এই প্রক্রিয়াকে ঠেকানোর জন্য ইসলামপন্থী রাজনৈতিক গোষ্ঠী   নানানরকম কার্যক্রম শুরু করে। এর সাথে যুক্ত হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। উল্লেখ্য যে,  দীর্ঘ ৪০ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার ব্যাপারে জনমত গঠন এবং সরকারকে বাধ্য করতে অনলাইন এক্টিভিস্টরা সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করেছিল।

এই মূহুর্তে বাংলাদেশে বই প্রকাশের অপরাধে দীর্ঘদিন ধরে জেলে বন্দি অবস্থায় দিন যাপন করছেন ব-দ্বীপ প্রকাশনির প্রকাশক সত্তরোর্ধ সামসুজ্জোহা মানিক।

সুধীবৃন্দ

২০১৩থেকে শুরু হওয়া সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলী সম্পর্কে আপনারা সবাই কমবেশি জানেন। আমি এসবের বিশদ বর্ণনা দিয়ে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটাতে চাই না।

আসলে আমি এবং আমরা বলতে চাই একটা বর্বর সময়ের কিছু কার্যক্রম ও অলীক কথাবার্তার পুনরাবৃত্তির উপর ভিত্তি করে সভ্যতার চাকাকে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার তৎপরতাকে আমরা বিনা চ্যালেন্জে কাজ করার সুযোগ দিতে পারি না। আমরা এই চ্যালেন্জটা করছি যুক্তি দিয়ে এবং লেখা তৈরির মাধ্যমে। কারো ইচ্ছে হলে এর জবাব পাল্টা যুক্তি দিয়ে লেখার মাধ্যমে দিতে পারেন।।
কিন্তু দয়া করে আমাকে, আমাদেরকে হত্যা করার ফতোয়া দিবেন না। চাপাতি হাতে, বন্দুক হাতে গুপ্ত ঘাতক পাঠাবেন না।

সুধীবৃন্দ,
যুক্তি এবং গঠনমূলক সমালোচনা প্রকাশ করার কাজটাই আমি করছিলাম। আর আমি আমার নিজের কিছু লেখাজোকা বিশেষ করে কবিতার ভালবাসায় মগ্ন হয়ে ছিলাম। মৌলবাদি শক্তি ঠিক জায়গাটাতেই আঘাত করেছে। দীপনের মৃত্যু এবং আমার আহত অবস্থায় দেশ ত্যাগ করার পর, এখন  বাংলাদেশে কোন প্রকাশক সাহস করবে এই চ্যালেন্জগুলো, যৌক্তিক সমালোচনাগুলো প্রকাশ করতে? আমি হাসপাতালের বিছানাতে শুয়ে থাকা অবস্থায় একটা সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম যে, আমি পিছু হটবো না। এই প্রত্যয়টা আমি এখনো ধারন করি। কারণ আমি জানি বই,টেক্সট একটা সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনে অনেক বড় ভুমিকা পালন করে। আমি তাই ফিরে আসতে চাই পুনরায় বইয়ের জগতে, প্রকাশনার জগতে। যে কোন ধরনের বিকল্প মাধ্যমে হোক তা।প্রকাশনাকে আমি শুধু ব্যবসা মনে করি না, এটা আমার কাছে একধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দলোনও বটে। আমি আশাবাদি বাংলাভাষাভাষি নতুন লেখকদের নতুন নতুন বিষয়ের লেখা পাঠকদের কাছে পোঁছে দিতে পারবো পুনরায়।

আধুনিক সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম পীটস্থান লন্ডন। ঐতিহাসিক লন্ডনের এই ঐতিহাসিক বৃটিশ লাইব্রেরিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সামনে ফ্রিডম অব স্পিচ,ফ্রিডম অব এক্সপ্রেসন ও ফ্রিডম অব পাবলিকেশনের প্রতিনিধি হিসাবে কথা বলতে পেরে আমি অনেক গর্ব ও অনুভব করছি।
মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির সঙ্গে থাকুন।
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

Ahmedur Rashid Chowdhury (aka Tutul) was born in Sunamganj, Bangladesh on 28 March 1973.

In 1990 Tutul published and edited the first issue of his magazine Shuddhashar which soon became a platform for a group of young writers. In 2004 Tutul established a publication house also entitled Shuddhashar, with the slogan ‘To inspire, not to impress’. Shuddhashar became famous for publishing young and free-thinking writers and to date has published around 1000 books. In 2013 Shuddhashar was presented with the Shahid Munir Chowdhury award by the Bangla Academy.

Tutul is also a writer, whose work has been published in numerous newspapers, magazine, and blogs. He has also published a collection of poetry entitled Nil Boshe Shish Kate Thot.

On 31 October 2015 Tutul was attacked in his offices by Islamic fundamentalists and left critically injured. Following the attack, he is now living in Norway as one of the International Cities of Refuge Network’s guest writers, where he is continuing to write poetry and hopes to start an online magazine. He is also studying and researching the rise of terrorism in Bangladesh and other developing countries.